প্রবন্ধঃ শালীনতা আপেক্ষিক! / রাজা দেবরায়


সময়ের সাথে সাথে শালীনতা, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। একসময় "কাদের কুলের বউ গো তুমি, কাদের কুলের বউ?" গানটি অশালীন হিসেবেই বিবেচিত হতো। অভিভাবকরা সন্তানদের এই গানটা শুনতে বা গাইতে মানা করতেন। শুনলে বা গাইলে খারাপ হয়ে যাবে। কারণ এটা ছিলো চটুল গান, তাই খারাপ!

বর্তমানে এটা গাইলে বা শুনলে বা পছন্দ করলে অবাক হয়ে যাবেন অভিভাবকগণ। নিষেধ করার তো প্রশ্নই আসে না। কারণ এখন এটা সেকেলে গান। এর থেকেও অনেক অনেক বেশী চটুল গান বাজারে উপস্থিত! এগুলোও আবার কোনো একসময় শালীনতার মাত্রা পেয়ে যাবে!

আসলে আমরা চট করেই শালীন বা অশালীন আখ্যা দিয়ে দিই। মাপকাঠিটা আসলে নির্ভর করে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে। চট করে আরো কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি।

মোহরা ফিল্মের জনপ্রিয় গান "তু চিজ বড়ি হে মস্ত মস্ত..."। এখনো এটাকে চটুল গান, খারাপ গান ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হয়। ভদ্রসমাজে এখনো সেভাবে মান্যতা পায়নি এই গানটি। অথচ এই খানটি একটি সুফি গান থেকে নেওয়া। এটি একটি রাগাশ্রয়ী গান। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা বিশেষত ফিল্মের গান শোনার থেকে দেখি বেশি! গানটা শোনার সাথে সাথেই দৃশ্যটা মনের মধ্যে বিচরণ করতে থাকে। ফলে তখন গানটি খারাপ তকমা পেয়ে যায় খুব সহজেই! এই ফিল্মেরই আরেকটি গান "টিপ টিপ বরসা পানি, পানিনে আগ লগাই..."। খুবই শিক্ষিত সুর, তাল, লয়, ছন্দ থাকা সত্ত্বেও ঐ একই কারণে বাজে গানের শিরোপা দেওয়া হয়েছে।

আবার "গোরে বদন পর ভিগি শাড়ি, অর লগে সুন্দর ইয়ে নারী", "তোরে নেয়না রসিলে কটিলে হায় রাম" এবং "লাগা চুনরী মে দাগ ছুপাও কেয়সে" ইত্যাদি গানগুলো ভালো সুর ও রাগাশ্রয়ী হওয়ায় বিশিষ্টজনদের সমাদর পেয়েছে।

কিন্তু গানের কথাগুলো নিয়ে কী বলবেন? আগের গানগুলোর কথার সাথে (অল্প হলেও) মিল পাচ্ছেন কি? আসলে যেকোনো বিষয়েই মতামত দেওয়ার আগে আমাদের ভাবনার মধ্যে দূরদর্শিতা থাকতে হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষিত হতে হবে, দৃষ্টিকোণ স্বচ্ছ থাকতে হবে। তবেই পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ভাবনা, চিন্তন, দর্শনের মূল্যায়ন করবে।।

No comments:

Post a Comment