মেরেলিন মনরোর জন্য প্রার্থনা

ছবিতে মেরেলিন মনরো 

নিকারাগুয়ার কবি এর্নেস্তো কার্দেনালের বিখ্যাত কবিতা ‘মেরেলিন মনরোর জন্য প্রার্থনা’৷                অনুবাদ: পারভেজ চৌধুরী৷


দয়াল
এই রমণীকে তুমি গ্রহণ করো। মেরেলিন মনরো নামে যে ভুবনখ্যাত।
যদিও এটা তাঁর আসল নাম নয়। (তুমি তো জানোই, ৬ বছরের ধর্ষিতা এই অনাথ শিশুর আসল নাম, যে কিনা ১৬ বছরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে)
সে তোমার সামনে অপার হয়ে বসে আছে
মেক-আপহীন,
নিজস্ব সংবাদসংস্থা, আলোকচিত্রী ছাড়া
এমনকি কোন অটোগ্রাফ শিকারীও নেই আশেপাশে
একা
নভোচারী যেমন মহাশূন্যে রাতের মুখোমুখি হয়।
প্রণীত মানুষের ভিড় জমার আগেই গির্জায় নগ্ন হবে একদিন (টাইম পত্রিকার ভাষ্যমতে)
এই ছিলো মেয়েবেলার স্বপ্ন!
সবাই অবনত
সর্ন্তপণে তার হেঁটে যাওয়া, কারো মাথায় যেন ছোঁয়া না লাগে!
আমাদের স্বপ্নের সাথে তোমার বোঝাপড়া বেশ ভালো, মনোবিজ্ঞানীদের চেয়ে।
গির্জা,
বাড়ি,
গুহা;
এ-সবই মাতৃগর্ভের মতো কুশলে থাকার প্রতীক
কিংবা আরও অন্য কিছু ...
একটি বিষয় পরিষ্কার, তার ভক্তদের মাথা
(ঝলমলে আলোতে থাকার পরও ছিলো অন্ধকারে)
এটা তো ঠিক, টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের স্টুডিও কোনো মন্দির নয়
মার্বেল কিংবা স্বর্ণের মন্দির বিরাজ করে তার দেহের ভেতর
যেখানে চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে মানবজাতি।
যা চালায় কালের বাণিজ্য বাতাসে নষ্ট টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের কর্তাব্যক্তিরা
তোমার আখড়াকে যারা রূপান্তর করেছে চোরের আস্তানায়।
দয়াল
পাপ আর তেজস্ক্রিয়তায় পঙ্কিল নশ্বর এ চরাচর।
এসবের জন্যে দোকানের এই তরুণ কর্মচারীর উপর দোষ চাপাতে পারো না
যে অন্যদের মতোই স্বপ্ন দেখেছে একদিন তারকা হবে।
স্বপ্ন তার সত্যি হয়েছে শেষাবধি। (কিন্তু এটা টেকনোকালার বাস্তবতার মতো)
যেভাবে আমরা চিত্রনাট্য দিয়েছি, সে অভিনয় করেছে শুধু;
গল্পটা সাদামাটা, অর্থহীন কিন্তু জীবন থেকে নেয়া।
দয়াল
ক্ষমা করো তাঁকে ।
বিংশ শতাব্দীতে বিশাল এই রিয়েলিটি শো নির্মাণের পেছনে যারা কাজ করেছি
তাদেরও ক্ষমা করো।
হতাশগ্রস্থ, প্রেম-কাঙাল মেয়েটার হাতে মনোচিকিৎসকের পরামর্শে
ভালোবাসাময় অন্তর চুক্তির বদলে তুলে দিয়েছি চেতনানাশক।
কারণ আমরা মহামানব নই।
মনে রেখো দয়াল
ক্যামেরার প্রতি ক্রমশই ভয় বাড়ছিলো তার এবং কিছুটা অভিমান
মেক-আপের প্রতি তীব্র বিরাগ
তবুও প্রতিটি দৃশ্যে নতুন করে নিতে হয়েছে মেক-আপ
স্টুডিওতে সময়খেকো সন্ত্রাস প্রতিনিয়ত তাড়া করেছে তাঁকে ।
আর সব তরুণীর মতো তারও স্বপ্ন ছিলো তারকা হবার।
যে জীবন বিরহকাতর, টালমাটাল ও দুঃস্বপ্নের মতো এলোমেলো
যা কিনা মনোচিকিতসকেরা বিশ্লেষণ করেছে একের পর এক।
দুচোখ বন্ধ করে চুমো খাওয়া
এই ছিলো তাঁর শিহরণ জাগানিয়া
বিস্ময় বিশ্বেরও।
চোখ খোলার পর বুঝতে পারে
সে আছে ফ্ল্যাডলাইটের মুহুর্মুহু আলোর ঝলকে হাজারো রঙের খেলায়।
লাইট নিভিয়ে
ঘরের দুটো দেয়াল সরিয়ে নেয়া হলো (তা ছিলো শ্যুটিং সেট)
চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মাতার নীরব প্রস্থান, দৃশ্যের শেষ এভাবেই।
প্রমোদতরীতে বেড়াতে যাওয়া,
সিঙ্গাপুরে চুমো,
রিওতে নাচের আসর,
কিংবা উইন্ডসরের ডিউক অব ডাচেসের বাড়িতে রাতের গুমোট পার্টি
এ সবই মলিন এপার্টম্যান্ট, হতশ্রী রুম থেকে দেখা।
শেষ চুমো ছাড়াই ছায়াছবিটি শেষ হলো ...
বিছানায় পাওয়া গেলো তাকে মৃত, হাত ছিলো টেলিফোনে
গোয়েন্দারা কখনোও জানতে পারেনি, কাকে ফোন করতে চেয়েছিলো?
এমন কাউকে ফোন করেছিলো ...
হয়তো বারবার শুনেছিলো রেকর্ড করা গলায় ‘রং নাম্বার’ ।
অথবা কোন গ্যাঙস্টারের দ্বারা আহত হয়ে
সংযোগ বিচ্ছিন্ন টেলিফোনে রেখেছিলো হাত ...
দয়াল
যাই হোক না কেন, সে কল করেছিলো অথবা করেনি
(হয়তো কাউকেই করেনি কিংবা এমন কাউকে করেছিলো যার নাম্বার নেই লস এঞ্জেলসের টেলিফোন ডিরেক্টরিতে)
তুমি তাঁর ঐ ফোনটা অন্ততঃ একবার রিসিভ করো।

  ______________________
🌻 কবি এর্নেস্তো কার্দেনাল

No comments:

Post a Comment