দন্তণ্যজবর্গিয় কবিতা : মজুমদার নোভেল

০১


সীমান্ত ব্যারিকেড থেকে আবদ্ধ কাঁটাতার পর্যন্ত, মাটির বর্গমাইল
যতগুলো মাইলফলক;- প্রিয়তমা, তোমার নামে লিখে রাখলাম- 

অনন্তবাসনাপুষ্প।

নিরিখ, কাঠের পাটাতনে এখনও রাত পোহায়, সূর্যের মসলিন ভোর হতে সকাল দুপুর পুড়িয়ে আসন্ন বিকেলে এসে চোখ রাখে সাদাকালো সংবাদ। মার্বেল কাটা এই মর্ডান পোস্টমর্টেমের হৃদয়- 
কেটে ফেলা আঙুলের টুকরো, ক্ষতের ক্ষরণকারী তারকাটা রাত, ধুলোবালির পরে আবার কখন মেঘনা শৈশব?-

হাটতে হাটতে আজ রাষ্ট্রাক্রান্ত যৌবনের বেদনা, ঝিঁ-ঝিঁঝিঁ ডাকা ক্রন্দন আর পথহারা ধূলো-পা
পায়চারি আমাদের কখনওই থামেনি, থামবেনা কোনদিন- আমাদের অনন্তপথ- মহাকালের। 

অনন্তবাসনাপুষ্প ও প্রিয়তমা। 


০২


পুড়েছি পাতার শোকে অনাব্রত রাত-
ছাতিমের গন্ধে ভেসে তাড়ায় হিজলের রোদ।

শহরে তখনও ত্রিভুজাকৃতি রোদ- ফুটপাতে ছায়া মেলে দিল শতবর্ষী রমনা।
 মেঘ কুড়িয়ে কুড়িয়ে আনে জ্যাম; লেগে থাকে তোমার আমার মধ্যিকার যেমন বিভেদ-
শুকতারা কখনও কখনও চন্দ্রগ্রস্ত বিষাদ হয়? তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি এটাও, এমন অনেক  অজিজ্ঞাসার ভীড়ে-
চাঁচের চুন খসতে খসতে কখন তোমার ফেরার তাড়া নিকট চলে এলো, ভাবিনি তেমন নাভাবার মতোই 

নয়তো
তোমাকে দিয়েই হ'তো আমার বিটলস লিকার চা, আর ঘোড়াদের কার্তিক খাওয়া পূর্ণিমা।

বিটলস লিকার চা, আর ঘোড়াদের কার্তিক খাওয়া পূর্ণিমা। 


০৩


এইখানে- 
ঠিক বিসর্গকোটি বছর আগে তোমার চোখ জড়ানো জরায়ু তে দেখেছিলাম অ্যামিবার হায়েনা
জ্বালাতক দ্বীপ গোধূলির সর্ষে রোদ ভিজিয়ে রেখে গেছে ঘাম; আর্তক-
নক্ষত্র'রা জ্বালাময়ী রাত জেগে জেগে খুন হয়েছিল সেসবদিনে, অথচ পৃথিবীর সমগ্র উল্লাসে অবক্ষয় বিখণ্ডায়ন রাতদিন-

রক্তের গন্ধ, গন্ধের পিপাসা- আর ফুসফুস তাড়িত নিঃশ্বাস
দীর্ঘিত খন্ড করে ফেলেছে আমাদের- প্রজন্ম, ধর্ম, রাষ্ট্র- শামুকের মতন মন, মন থেকে ছিনিয়ে শরীর, রোজনামা শরীরের ক্রন্দন।

স্মৃতির হায়েনারা-


০৪


বিষাক্ত শহরে সন্ধ্যা পরা কুয়াশার আড়ালে চিম্বুক পাহাড় পর্যন্ত ব্যাথার পারদ পেরিয়ে-

আসতে পারো।

উরুজ্যোছনার নিশ্বঙ্গতায় তাকিয়ে দেখে নিব তোমার শঙ্খচূর্ণ বেদনাদের, একাকী-
অপেক্ষার রঙখসা চেয়ারে আপেলের ভেজা দরদ, হৃদয় কেটে কেটে স্তন, তারপর মন্থন।

অর্ধেক ঘন ক্ষত শরিয়তে আর অর্ধেক কোরানের আয়াতে;
আমার নিঃশ্বাস ধোয়া ঘ্রাণ তোমার চন্দন আতরে।

সন্ধ্যাভূমি।


০৫


শহরের যাবতীয় ঘামের গন্ধ গুলায় লুকিয়ে থাকে প্রত্নতাত্ত্বিক নাগরিক চিহ্ন যত- 
হঠাৎ পায়ের ছাপ, অথবা নিরলস চুম্বনের দাগ- সন্ধানী জাহাজের আরওকিছু।
কাঁঠালের ঘামে জবজবে যে সবুজের রঙ, চলতি দেখা দু'চারটে নারীর আধুনিকা চমড়া
ঘুম থেকে বেরিয়ে এসে চোখ ভর করে কর্পোরেশনের স্থাপত্যে নির্মিত পাখিদের মলচিত্র
সাথে সাথে রংরুট-
ফইল্লাতলির ইলিশবাজার, বাঙলাভাষার চাল, সভ্যতার দুর্ভিক্ষ হাহাকার। 
 মঠের দিকে জিউস নাকি ইবলিশ?

কবিতা আর লিখবো না ভেবে ভেবেও, নেশাদ্রব্য- সিগারেটের মতন নাছোড়শালা

ভালোবাসা প্রেম প্রণয়-
রবীন্দ্রান্ঞ্জন রুদ্র বিনয়
জীবনের ডাকে সাড়া দিয়ে 
শক্তি মহাদেবের একছিটে উল্লাস 
ঋত্বিকচোখ ভরা স্বাধীনতার ক্রোধ! 

অবশিষ্ট বলতে আমার কেবল আছে বলতে ছাপোষা অহেতুক চিন্তা আর টুকটাক খুচরো শব্দ-
অভাবের চাইতেও দিগুণ শক্তিশালী, আগুন, এটেল মটির পিঞ্জর৷

আমাকে বুলেটাঘাত করলেও ক্ষতি নেই, ক্ষতি নেই ভালোনাবাসলেও- তথাকথিত ইতর-ভদ্র বেওয়ারিশ কুকুর।

No comments:

Post a Comment