হিম ঋতব্রত এর কবিতা: পচন পাতার ঘ্রাণ

ষোলই শ্রাবণ চোদ্দোশো সাতাশ 


রূপণতী : কাব্য ও কাম দেবী

তাঁর বুকের ভেতর পাথরের গন্ধ— রক্ত ছড়ানো পাথরে ফুটে থাকে সুন্দর হেমলক ফুল! সুন্দর অতি নির্মম! 

আমি বারবার আহত হই— নিহত হই। 


এগারই কার্তিক চোদ্দোশো সাতাশ 


জানি সে আমাকে এখনও ভালোবাসে খুব 
আগের চেয়ে আরও বেশি সম্মান দ্যায়
যদিও স্বামী-সন্তান-সংসার আছে, 
তবুও কী অদ্ভুত গেরস্তিনি চোখ
আমার দিকে তাকিয়ে করুণ সুখে ভাসে!

ওর ঘর ও উঠোন— মনে বয়ঃসন্ধি টেনে আনে
প্রথম চুম্বনের শব্দ শুনতে পাই...
একটি ছোট্ট শিশু— আমার আঙুল ধরে টানে! 

অদূরের বাঁশঝাড়ে একা হুতুম প্যাঁচা
কেঁদে কেঁদে বিষন্ন গানের আসর সাজায়!


দশই পৌষ চোদ্দোশো সাতাশ 


আমার ফসলি জমিতে এত সেচ দিই 
তবুও শস্যেরা শুকিয়ে যায়, জল নেই—
শেকড়ে ও শরীরে!
এত জল যায় কোথায়? কোথায় যায়?

সমস্ত খেত জুড়ে ইঁদুরের আবাসভূমি 
সব জল গড়িয়ে গড়িয়ে গর্তের দিকে... 

ওদের গর্ত ভর্তি জল, ভেসে যাওয়া ঘর
আর আমার ফসলেরা কেবলই মরে যায়—
জলের অভাবে! 


তেইশে ফাল্গুন চোদ্দোশো সাতাশ 


এই একা অসহ্য জীবনে— সহজেই কল্পনা করা যায়—
ডান হাতটিকে পুরুষ— বাঁ হাতটিকে নারী! 
তারপর দু'হাতে মিলে নাচানাচি, জড়াজড়ি, ধরাধরি... 
প্রকাশ্যে ও গোপনে অবাধ মেলামেশা! 
সমগ্র হাতের আঙুল-নখ কাদার মতো নিমিষেই 
এক হয়ে যায়! 

কী অদ্ভুত হাতের খেলা! 
কাউকে কারও প্রয়োজন নেই অথবা রয়েছে গভীর প্রয়োজন। 
কী দারুণ আত্মতৃপ্তি!
দু'হাতের সুখে সুখে অবাধ হস্তমৈথুন... 


ষোলই চৈত্র চোদ্দোশো সাতাশ 


সোজাসুজি দুরন্ত হাইওয়ে বেয়ে চলে যায়—
আমার শরীর ও বীর্য বহনকারী বাস। 
সড়কের দু'পাশে উঠতি বয়েসি কিশোরীর মতো ধানখেত
উর্বশী ধানগাছেদের ইশারার ভেতর— 
আমার ভীষণ ক্ষিপ্র দৃষ্টি! 

আমি চলি ধান কন্যারাও চলে মাঠের পর মাঠ।
এরকম সুস্বাদু সবুজ দেখে—
বিলের মাঝের ন্যাতানো তালগাছেরা ফুলে উঠে সটান দাঁড়িয়ে যায়!

আর হাওয়ায় হাওয়ায় ওদের অবাধ সঙ্গমে—
ধানে-গানে-প্রাণে পোয়াতি হবে ধান গেরছিনির পেট,
মাতাল রসে সোনালি হবে সমস্ত সবুজ। তাই—

বহনকারী যান আর কিছুই বহন করতে পারে না! 
সকল শুক্রাণু ছুটে চলে যায় ধানবিলের দিকে... 

5 comments:

  1. অনবদ্য ঋতু'দা।

    ReplyDelete
  2. মোহাম্মদ রফিকুল আলম সরকারJuly 12, 2021 at 9:26 AM

    পাতার পচন চলতে থাকুক

    ReplyDelete
  3. সকলের জন্য ভালোবাসা। মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

    ReplyDelete