রাত্রি সমীপে
মুখে নিস্প্রভ আলো, তুমি বিহ্বলতা আজ ঝরে সজল নীলাব্জ ভাসে দুই চোখ
পাপের দেহ ধুয়ে অন্ধ মরুতের কাছে উপাংশু হত্যার গল্প শোনো
নামতে নামতে আর কতদূর এককিনী রাত্রি সমীপে জানাবে কথার শোক।
জন্মের স্পৃহায়, মুরলীর ফুৎকারে নিস্পৃহ রাখাল, সে নির্মোক।
আকাশরেখার নীচে আঁধার প্রহরে মুক্তি নেই,আছে দুঃখদাহ
মুখে নিস্প্রভ আলো, তুমি বিহ্বলতা আজ ঝরে সজল নীলাব্জ ভাসে দুই চোখ।
গেছে বালক কোলাহল, অতৃপ্ত যৌবন, অনিবার স্রোতে দেখা তরল চোখ
মৃত্যুর নির্ঘোষ নক্ষত্রমালা ঝমঝম শব্দে জেগে ওঠে, প্রভূত নিগ্রহ
নামতে নামতে আর কতদূর এককিনী রাত্রি সমীপে জানাবে কথার শোক
নিগূঢ় ইন্দ্রজাল আঁখিতে সর্ষে ঘষে,তাই ইষ্টপথে মিথ্যা শ্লোক
অন্দরে কুঠার কোপ আদিম কাঠ ভাঙে, প্রণত হই পায়ে অমরত্ব দাও
মুখে নিস্প্রভ আলো, তুমি বিহ্বলতা আজ ঝরে সজল নীলাব্জ ভাসে দুই চোখ।
কোটি কোটি দরজায় আসা ও যাওয়া অযথা, উদগ্রীব স্বরে নেই পুণ্যলোক
তুমি তো স্থিরতা বোঝোনি, অলংকার ঝংকারে ফেলেছো সব স্পর্শ জলের বিষণ্ণ
নামতে নামতে আর কতদূর এককিনী রাত্রি সমীপে জানাবে কথার শোক।
নির্বাক সংসার,এ চন্দ্রাবলী দায়ে বাড়ে ঋণ, নেই পুণ্যশ্লোক
সূর্যের শ্রেষ্ঠ হাতে আজও ত্রাণ খুঁজে যাই অবিরত, চরাচরে অহরহ
মুখে নিস্প্রভ আলো, তুমি বিহ্বলতা আজ ঝরে সজল নীলাব্জ ভাসে দুই চোখ
নামতে নামতে আর কতদূর এককিনী রাত্রি সমীপে জানাবে কথার শোক।
নিঃসঙ্গতা
১
আমার একটা ছোট ঘর
বিশেষ কিছুই নেই
কেবল বুকভর্তি নিঃসঙ্গতা
সেখানেই ডুবে যাই, ভেসে বেড়াই
দিন যায় রাত আসে
সাঁতার জানার উপকারিতা এখানে কিছু নেই
এখানে জোয়ার-ভাঁটা নেই চাঁদের নিয়মে
তুমি যেদিনই আসো
তুমি এলে ভেসে উঠবো একবার
এখনি কথা বলো না
আমি জিরাফের মতো মাথা তুলে, জিরাফের ভাষায়
তোমাকে বোঝাবো আকাশে অযুত জ্যোতিষ্কলোক আর
আমাদের অজানা নিঃসঙ্গতা।
২
পর্বতের সানুদেশ থেকে আগ্নেয়গিরির মতো নেমে আসছো
তুমি আগুন নিয়ে আসছো
পায়ে
দু'হাতের করতলে
শুকনো বুকে
মাথায়
সমস্ত অহংকারে
তুমি ধীরে-ধীরে, নেমে এলে হরিণের মতো শান্ত জঙ্গলে
নিমেষে আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে দিগন্তের হাতে পায়ে
পুরানে কথিত কত গাছ
আদিম মানুষের প্রথম আগুন জ্বালানোর ইতিহাস নিয়ে শুয়ে পড়ছে মাটিতে
বুড়ো ঘোড়ার ক্ষুরের আঘাতে ধ্বনিত হচ্ছে ত্রাহিরব
পাখিরা উড়ে যাচ্ছে যেদিক খুশি
উঁচু আকাশের বিস্তৃত স্তব্ধতায়
তাদের মধ্যে কি উচ্ছ্বসিত জ্বালা, যন্ত্রণা
অথচ তাদের সমস্ত আর্তনাদের গায়ে ঢেকে যাচ্ছে
আগুনের দৈবাৎ উষ্ণ শীৎকার
তুমি আর কতদূর
নদী খালি গায়ে শুয়ে আছে তোমার জন্য
তুমি এসে ঝাঁপ দাও, তার নিঃসঙ্গ ঢেউগুলো
খোলা আগুন মুখে পাণ করো
তারপর তোমার সাথে জলের উপর
আগুন নিয়ে ঘর করবো....
আমি।
জোৎস্না ভেজা রাত
১
সব কথাই শেষ জোৎস্নার সাথে, তবুও বিষণ্ণ দু"চোখ
শিশিরের কণা,ভোরের ফুল জাগিয়ে রেখেছে অনিমিখা।
আলোর অরণ্যের ঘা ঘেঁষে দেখি,নির্জনতার দিকে তুমি বড্ড একা এখনও....
ফিরে আসবে না বলেই, চিঠিতে লিখে যাওনি চলে যাওয়ার কোন কথা।
তোমায় গচ্ছিত যত আলো, সদ্যোজাত ভোরের রং সবই ফিরিয়েছ,
তোমার যে ভীষণ তাড়া,তোমার ভীষণ অরণ্য প্রিয়
এক শতাব্দী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে থাকবে না তা আগেই বলেছ....
যদি ক্লান্তি আসে,জিড়িয়ে নিতে চাও,পাহাড়ি পান্থশালায় বসে কাউকে জানিও।
আমার সকাল বয়সের সমস্ত কবিতা, রাতের কাছে বসে,
এখানে কোন দীর্ঘশ্বাস নেই জন্মান্ধ জোনাকিদের
আমি ছুটে যাই মাতালের মতো, ঘ্রাণ নিয়ে যাই বসন্ত সমীরণে তাদের সাথে...
আর কিছুটা,আমি অচেতন হয়ে শুয়ে চুমু খাবো সাদা ফুলেদের।
২
জানলার কাছে ঝরে পড়া মুখস্থ করা দিনগুলো,
ফিসফিসিয়ে আমায় গত রাতের ঝড়ের কথা বলে।
আবার মিলিয়ে যায় সন্তর্পণে, কে যেন সন্দেহ পায়ে কুড়িয়ে আনে ধুলো
কুড়ি ছোঁয়া যুবতীরা আঙিনায় কাজল মুছে পৃথিবীর বয়েস নির্ধারণ করে অনেকখানি রাত গড়িয়ে এলে-
কতদিন কেটে যায় বিষণ্ণতায়,তোমার খোলা চুলের গন্ধে বিকেল দেখিনি অবসরে,
তোমার বয়েস বাড়েনি এখনো,স্মৃতিরা সারাদিন উড়ু উড়ু অর্থহীন মেঘ।
মাঝ পথে থমকে যাওয়া পাঁচটা বছর কেবল,যাযাবরী পালক ঝেড়ে আসোনি ঘরে
তোমার সমীহ শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে আছে আমার কামিনী ফুলের মিহি নেশা।
কতকগুলো প্রহর তোমায় নিয়েই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি,রাতের উঠোনে বসে চাঁদকে বিকেলের ধারণা লিখি,
মেঘের আড়ালে যে অযুত বেদনা জমা,কি জানি বেদনার সেই রঙ হলুদ খামে বোঝাতে পারবো কি না!
হাতের ভাগ্যরেখা প্রাচীন বিষাদের মতো উত্তরাধিকার প্রাপ্ত,যেখানে জাতিস্মরী কোন ভালোবাসা নেই।
তবুও প্রতিমুহূর্তে ভালোবাসা অন্ধ জরায়ু থেকে জন্ম নেয় বারবার, তুমি কি আসবে না!
৩
পছন্দের ডাকনাম,পরিযায়ী খাম আর অবহেলায় পড়ে থাকা কাজললতায়,
জড়িয়ে আছে আমাদের সংসারের যৌথ দহনের উপন্যাস।
কত রাত জেগে দেখেছি,তোমার বুক,ঠোঁট, ভিজে গেছে উপচানো জ্যোৎস্নায়
শরীরের প্রতিটা পার্বণে,আঘাতে আলপনা আঁকা তোমার নিতান্তই অভ্যাস।
আমরা কেউ কখনো স্পর্শ করিনি উলঙ্গ চিঠি, ছায়া বিছিয়ে ঠোঁটে উষ্ণ প্রস্রবণ।
টের পাইনি কিছুই, চাঁদের যৌবনে আঙুলে আঙুলে ঠুকে অরণ্য জ্বলে যায় শিমুলে-
উভয়ের নিভৃতে অভিমান,চোখ থেকে চোখ গড়ে ওঠে জলের গরণ
আমাদের আয়ু ভ্রমণে যায় চোরাবালির ধারে,কবেকার বিষণ্ণ ঝিনুক কান্না জমায় পাতলা পোশাকে,
দূরে জ্যোৎস্না মরে যেতে,অপরিচিত নীহারিকা স্পর্শদোষে রেখে যায় চিবুকে,আদরের ক্ষত
তবুও নিস্তরঙ্গ হাওয়ার পাশে, শিকড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একদৃষ্টি শান্ত থাকা।
মুখোমুখি আর কোন পথ নেই এক হয়ে,মিলেমিশে যাবে কাছাকাছি দূরত্ব
মায়া কবেই মুছে গেছে,এখন কেবল নিযুত পাপে চোখের কোণে জেগে আছে নির্মম কপটতা।
চাকা
পাখির নীড়ের মতো চোখে
পেয়েছিল শেষ ঘুম কারা
দ্বাদশী জোৎস্না গায়ে মেখে
নিঝুম বসে আছে কি? তারা
অপেক্ষায়, তবু নেই সাড়া
মৃদু কথা এবং বিস্ময়
ছুঁয়ে তাদের শরীরময়
চারিদিক সুদর্শন তিথি
তাতে নিভন্ত অগ্নি বলয়
পায়ে হেঁটে পার করে নদী
No comments:
Post a Comment