অধিকাংশ বাঙালি প্রকাশ্যে যেগুলোকে অশ্লীল আখ্যা দেয়, ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ ব্যতিক্রমভাবে সেগুলোকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। ‘নিবিড় নীলিমা’ বইতে তিনি লিখেছেন-
বই প্রচুর পড়েছি; অশ্লীল বইও কম পড়ি নি। প্রথাগতভাবে যেসব বইকে অশ্লীল বলা হয়, তার অধিকাংশকেই অবশ্য আমার অশ্লীল মনে হয় না; তবে নীতিপরায়ণগণ যে সব বইকে সুনীতির ঝুলি ব'লে মনে করেন, এমন অনেক বইকেও আমার মনে হয় অশ্লীল, নােংরা৷ বাঙালির শ্লীলতাবোধ খুব সংস্কৃত নয়; বাঙালি সাধারণত সুন্দরকে অশ্লীল আর নোংরাকে মনে করে সমাজসম্মত। রূপসীর নগ্ন বাহু তাদের কাছে অশ্লীল, ভিখিরিনির অস্থিসার উলঙ্গ দেহ সুশ্লীল। নারীপুরুষের আন্তরিক শারীরিক সম্পর্ক তাদের কাছে অশ্লীল; আর বিবাহিত বলাৎকার শ্লীল। কামসূত্র, দেকামেরন, লেডি চাটারলিজ লাভার, ডোরিয়ান গ্রে, ট্রপিক অফ ক্যান্সার, রাত ভ’রে বৃষ্টি, প্রজাপতি আমার কাছে অশ্লীল নয়, সুন্দর। আমার কাছে অশ্লীল সে রচনা, যা ভণ্ড; অশ্লীল ঐ পত্রপত্রিকাগুলো, যেগুলো অভিনেত্রীর উলঙ্গ ছবি অফসেটে ছেপে জেহাদ ঘোষণা করে নগ্নতার বিরুদ্ধে; অশ্লীল সে সব বই ও পত্রপত্রিকা, যেগুলো ধর্ষণের সংবাদকে ব্যবহার করে পুঁজিরূপে। আমার কাছে অশ্লীল হচ্ছে নোংরা ছবির সেই নায়িকার বচন, যে বলে স্বামীর পায়ের নিচে তার বেহেস্ত।
No comments:
Post a Comment